Thursday, April 16, 2015

মহানবীর (স.) সময়কার লেখা কুরআনের সন্ধান ও প্রসঙ্গ কথা

 

নমুনা-১
মোহাম্মদ আবদুর রহীম

 সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মহানবীর (স.) সময়কার লেখা কুরআনের সন্ধান বিষয়ক খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে। বইপত্র ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সহজলভ্য ও যাচাইয়ের সুযোগ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সঠিক তথ্য বের করার সুযোগ হয়েছে। প্রকাশিত খবরটি সঠিক কিন্তু ছবিটি সঠিক নয়।

দৈনিক সংগ্রাম ও আরটিএনএন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ছবিটি তুরস্কভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড বুলেটিনের বরাত দিয়ে ছেপেছে।
স্ক্রিনশট-১
 ঐ সাইটটিতেও একই ছবি আছে।(স্ক্রিনশট-১) অন্যদিকে সময়ের কন্ঠস্বরসহ কয়েকটি সাইটে প্রকাশিত নিউজের সূত্র ওয়ার্ল্ড বুলেটিন দিলেও ভিন্ন ছবি ছেপেছে।(স্ক্রিনশট-২)
স্ক্রিনশট-২
 প্রকাশিত এই দুটি ছবি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এগুলো কুরআনের পাতা ও লিপির ভেতর জের-জবর-পেশ নোকতা ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ মহানবীর (স.) সময়ে কুরআনের লিপিতে এগুলো ছিলনা। উমাইয়া খলিফা মারওয়ানের সময়ে মক্কার প্রশাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাকাফি(৬৬১-৭১৪ ইসায়ি) অনারব ও আরবি ভাষায় অনভিজ্ঞ পাঠকদের সুবিধার্থে কুরআনে জের-জবর-পেশ প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করেন। সে সময় বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ খলিল ইবনে আহমদ সিরিয় লিপি থেকে স্বরচিহ্নগুলো সংগ্রহ করে কুরআনে প্রয়োগ করেন।
এছাড়া উভয় ছবিতে ব্যবহৃত ক্যালিগ্রাফি লিপিটি মাগরেবি কুফি বা আন্দালুসিয়ান কুফি। পশ্চিম আফ্রিকায় এই লিপিটি ১২-১৩ শতকে কুরআনের লিপি হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।বর্তমানেও এই লিপিতে সেখানে ক্যালিগ্রাফি করা হয়। এলিপিতে হরফের রেখাগুলো নমনীয় এবং হরফের শেষাংশ ক্রমশ চিকন হয়ে নেমে যায়। হরফের শুরুটা মোটা বৃত্তাকার বা গোলায়িত হয়।নোকতা-জের-জবর-পেশ-শাদ্দাহ স্পষ্ট এবং আয়াত শেষে ত্রিকোণাকার (মুসাল্লাস) লতা বা পেঁচানো দড়ির মত নকশা থাকে।
সুতরাং এটি নিউজের সাথে সংগতিপূর্ণ ছবি নয়। নেটে সার্চ দিয়ে আসল ছবি পাওয়া গেল। সেখানে কার্বন -১৪ ডেটিং-এর জন্য প্রাচীন ঐ গ্রন্থটির একটি ছবি দেয়া আছে।(নমুনা-১)
আলোচিত হেজাজি মায়েল কুফি লিপির কুরআন


উল্লেখ্য, জার্মানির বার্লিন স্টেট লাইব্রেরিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর সময়কার লেখা পবিত্র কোরআনের কপির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রায় শত বছর ধরে এটি এই লাইব্রেরিতে সবার অগোচরে পড়ে ছিল।
জুরিখের লাইব্রেরিতে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তিন পৃষ্ঠার চর্ম কাগজে কুফি লিপিতে লেখা নমুনাটি ৬৪৯ থেকে ৬৭৫ সালের মধ্যে হাতে লেখা হয়েছিল। তুবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের “কুরানিকা প্রকল্পের” গবেষকগণ এটি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালান।
স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রকল্পের আওতায় এটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এজন্য ইউরোপের সমগ্র কোরআনের কপি যাচাই করে দেখা হয়।
বার্লিন লাইব্রেরিতে ১০০ বছর ধরে এই কপি সবার অলক্ষ্যে পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মিশরীয় এক বিজ্ঞানী ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অথবা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এটি জার্মানিতে নিয়ে আসেন।
গবেষকরা ধারণা করছেন, গ্রন্থটি মহানবী (স.) ওফাতের ২০-৪০ বছর পরে লেখা হয়েছে। মূল গ্রন্থের অংশবিশেষ এ গ্রন্থটি ১৫৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত। সুরা বনি ইসরাইল(১৭)এর ৩৫ নং আয়াত থেকে সুরা ইয়াসিন(৩৬)এর ৫৬নং আয়াত পর্যন্ত আছে। এর লিপি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ‘হেজাজি মায়েল কুফী’ লিপিতে এটি লেখা হয়েছে। মূল লেখায় নোকতা-জের-জবর-পেশ ছিল না। পরে এতে সংযোজন করার আভাষ পাওয়া যায়। বিরামচিহ্ন হিসাবে গোলায়িত তিনটি নোকতা ত্রিকোণাকার আকারে দেয়া হয়েছে। গ্রন্থটির প্রতিটি পৃষ্ঠা আলাদা করে লিখে জুঝ বাধাই করে গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে। এতে কোন পৃষ্ঠা নম্বর নেই। বর্তমানে কলমকে ৪৫ডিগ্রি কোনে কেটে লেখা হয় কিন্তু এই লিপির কলম ১৮০ ডিগ্রি কোনে কাটা হয়েছে এবং চাল পুড়িয়ে চিনি, নিশাত ও আরবি গাম(আঠা) মিশিয়ে হাতে তৈরি কালিতে এটি লেখা হয়েছে।তবে শব্দের মধ্যে কোথাও কোথাও যের-জবর বুঝানোর জন্য লাল কালির ফোটা হরফের উপর-নিচ খুব কাছে ব্যবহার করা হয়েছে।কোথাও একই কালিতে হরফের নোকতা খুবই ছোট ও প্রায় অষ্পষ্টাকারে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুরআনের লিপি হিসেবে প্রথমদিকে কুফি লিপির স্থানীয় নাম যেমন-হেজাজি, মক্কী, মাদানী ব্যবহৃত হত, তেমনি এর লেখন বৈশিষ্ট্য হিসেবে জযম, মাশ্ক, মায়েল(আইটালিক) নামকরণ করা হত। এই কুফি লিপিতে প্রায় ৩শ বছর কুরআন অনুলিপি করা হয়। পরবর্তী ৩শ বছর মুহাক্কাক লিপিতে কুরআনের অনুলিপি করা হয়। এরপর রায়হানী লিপি তেমন ব্যবহার হয়নি, রায়হানি লিপির কয়েকটি কুরআনের কপির কথা জানা যায়।তারপর তুরস্কের ক্যালিগ্রাফারগণ নাসখি লিপি কুরআন অনুলিপিতে ব্যবহার শুরু করেন এবং এটি এখন পর্যন্ত কুরআনের লিপি হিসেবে টিকে আছে।
ইরানে ইসলামের বিজয়ের পর ইরানের ক্যালিগ্রাফারগণ প্রথমদিকে কুফি লিপিতে কুরআন অনুলিপি করেন। ক্রমশ এটি এত উন্নতি লাভ করে যে, কারামাতিয়ান কুফির নাম জগদ্বিখ্যাত হয়ে যায়। তারপর নাশখ এবং তালিক লিপির সমন্বয় করে ‘নাশতালিক’ লিপি নামে একটি লিপি আবিস্কার হয়। ইরানের ক্যালিগ্রাফারগণ নাশতালিক লিপিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কুরআন অনুলিপিতে এর ব্যবহার অব্যাহত রাখেন। তবে ইরানের বাইরে এই লিপির কুরআন তেমন একটা নজরে পড়ে না।
পশ্চিম আফ্রিকায় কুফি লিপি স্থানীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে মাগরেবি লিপি, আন্দালুসিয়ান কুফি, কাইরোয়ান কুফি ইত্যাদি স্থাননামে এবং মাবসুত, মাগরেবি সুলুস, মাগরেবি নাসখী নামে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লিপিতে কুরআন লিপিবদ্ধ করা হয়।
চীন-জাপানে চিনি লিপি নামে নাশখী লিপির পরিবর্তিতরূপে কুরআন অনুলিপি করা হয়।
ভারত উপমহাদেশে তুর্ক-আফগানদের পৃষ্ঠপোষকতায় কুফি, নাসখি লিপির কুরআন প্রথম পর্যায়ে করা হত। পরে বিহারের ক্যালিগ্রাফার এবং সমুদ্রপথে আগত মিশর-সানআ, হেজাজের ক্যালিগ্রাফারগণ বাংলাদেশে বিহারি লিপি(নাশখি ও কুফি লিপির সমন্বয়) দিয়ে কুরআন অনুলিপি করেন। এটা সুলতানি আমলের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে গজনি ও কাশ্মিরের একদল ক্যালিগ্রাফার বাঙলার সালতানাত শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং নাশখি লিপির চমৎকার নজরকাড়া কুরআন অনুলিপি করেন। লৌখনুতে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লৌখনু নাসখি নামে একটি লিপিতে কুরআন অনুলিপি করা শুরু হয়। পরবর্তিতে এটি ‘হিন্দি নাশখী’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
লৌখনু ছাপা কুরআন, কুরআন কমপ্লেক্স, মদিনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব, ১৪২৮ হিজরি

১৮০০ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইংরেজদের মাধ্যমে কুফি লিপির পরিবর্তিত নিম্নমানের একটি ফন্টসেট তৈরি করা হয় এবং এই টাইপসেট দিয়ে হাত কম্পোজে কুরআন ছাপা শুরু হয়। এটি আজও অব্যাহত আছে। এই লিপির কুরআনকে ‘কলিকাতা ছাপা’ কুরআন বলে।
কলকাতা ছাপা কুরআন

 এতে বাঙলার অধিকাংশ মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে এতে হাতে লেখা কুরআনের ক্যালিগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য ও নান্দনিক ভাব পাওয়া যায় না। তাছাড়া হাতেলেখা কুরআনের যে আধ্যাত্মিক আবেদন রয়েছে, তা থেকে বাঙলার জনগণ বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে কুরআন হিফজ করার জন্য মাদ্রাসাগুলোতে লৌখনু ক্যালিগ্রাফিক লিপির কুরআন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কুরআন হিফজের জন্য কলিকাতা ছাপা কুরআনের ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না।
কুরআনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার লিপি স্থান ও সময়কালের চিহ্ন বহন করে।ক্যালিগ্রাফিতে দক্ষ ব্যক্তিগণ সহজে এর পর্যালোচনা ও সঠিক বিষয় তুলে আনতে পারেন। শুধু আরবি জানলেই এটা করা যায় না। আর আরবিতে অনভিজ্ঞরা এতে ভুল করা স্বাভাবিক।আশার কথা হচ্ছে, বর্তমানে বাংলাদেশে কুরআনের আরবি ক্যালিগ্রাফির বিষয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং এবিষয়ে দক্ষ লোক তৈরি হচ্ছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো এগিয়ে আসতে হবে এবং এতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে।

তথ্য সুত্র :

. THE RISE OF THE NORTH ARABIC SCRIPT AND ITS KURANIC DEVELOPMENT, WITH A FULL  DESCRIPTION OF THE KURAN MANUSCRIPTS IN THE ORIENTAL INSTITUTE.
THE UNIVERSITY OF CHICAGO PRESS, CHICAGO, ILLINOIS. JUNE 1939
. Hat Sanatindan (calligraphy) ismek husn-i-Hat Hocalari Karma Sergisi  2013 Turkey
. CALLIGRAPHIC ART IN SULTANATE ARCHITECTURE  Shah Muhammad Shafiqullah ASIATIC SOCIETY OF BANGLADESH First Published: February 2012
. ISLAMIC CALLIGRAPHY, ANNEMAIE SCHIMMEL
৫. কাওয়ায়িদুল খত অল কিতাবাহ ওয়া তাত্ববিকাতিহা, ড. খালেদ মাহমুদ মুহাম্মদ ইরফান, দারুল নাশরি দুআলি, সৌদি আরব,২০০৮
৬.আল খত আল আরাবি মিন খিলাল আল মাখতুতাত, এরাবিক ক্যালিগ্রাফি ইন ম্যানাসক্রিপ্ট, রিয়াদ, সৌদি আরব ১৯৮৬
৭. ইন্টারনেট

Friday, December 26, 2014

সাত্তার জামে মসজিদ

 

রাজধানী ঢাকার অদূরে শ্রীপুরের মাওনায় আন্তর্জাতিক মানের বিশাল আয়তনের একটি মসজিদ নির্মান করা হচ্ছে। বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী আবদুস সাত্তার এ মসজিদটির নির্মাণ ব্যয়ভার বহন করছেন।

মসজিদটিতে পর্যায়ক্রমে আরবি ক্যালিগ্রাফি এবং ইসলামী নকশা দিয়ে সুশোভিত করা হবে। চমৎকার দৃষ্টিনন্দন শিল্প সুষমা মন্ডিত এ স্থাপনায় তিনশতেরও বেশি ন্থানে ক্যালিগ্রাফি ও অলঙ্করনের কাজ হবে। এজন্য তুরস্কের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ও কুরআন-মুফাসসির মোজাফ্ফর আহমদ সম্ভাব্য ক্যালিগ্রাফি(সুলুস লিপি) এবং পার্শ্ব অলঙ্করণ কাগজে ও সফট কপি করে পাঠান। একাজে তার পক্ষ থেকে সহায়তা করেন ঢাকাস্থ তুর্কি স্কুলের শিক্ষক আবদুল কারিম। ক্যালিগ্রাফি ও সৌন্দর্য বর্ধন কাজে প্রয়োজনীয় ক্যালিগ্রাফি ও নকশা সম্পাদনা, তদারকি, সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নতুন করে অঙ্কনের কাজ ও স্থাপনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীম। পবিত্র স্থাপনাটির মূল নকশা ও নির্মাণ করেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আর্কিটেক্ট কে এম মাহফুজুল হক জগলুল এবং তার প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ডেক সিস্টেম।  মূল স্থাপনার বাহিরে এ্যাকোয়া হোয়াইট মার্বেল পাথরে উৎকীর্ণ করে প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট সুলুস লিপিতে আরবি ক্যালিগ্রাফি করা হবে। মসজিদের অভ্যন্তরে মার্বেল পাথর, জিপসাম টেরাকোটা, টাইলস গ্লেজ ফায়ার ও রঙের মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি ও অলঙ্করণ করা হবে। বাহির ও ভেতরে পবিত্র কুরআনের আয়াত দিয়ে সুলুস শৈলীতে এসব ক্যালিগ্রাফি করা হবে। এছাড়া মিহরাব, আর্চ, সিলিং, কলাম, বীম ও দেয়ালে ফুল-লতা-পাতার মটিফ নির্ভর ইসলামী নকশা ও আসমাউল হুসনার ক্যালিগ্রাফি সহকারে সুশোভিত করা হবে। এটি পাথর এনগ্রেভ, জিপসাম প্লাস্টার কাটাই, রঙ, টাইলস বার্ণ ও এ্যাম্বুস পদ্ধতিতে করা হবে।


বাংলাদেশে সাত্তার জামে মসজিদ প্রথম ব্যতিক্রমধর্মী একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের অলঙ্করণশোভিত মসজিদ। বলা যায়, বাংলাদেশে মসজিদ স্থাপত্যে ক্যালিগ্রাফি ও অলঙ্করনে আন্তর্জাতিক শিল্পমানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ এটিই প্রথম। বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণে আন্তর্জাতিক মানের ক্যালিগ্রাফি ও ইসলামী অলঙ্করণ শিল্পের অসাধারণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাত্তার মসজিদ অগ্রদূত ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

২০১২ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১৪ সালে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
সিলিং নকশা।  
উত্তর পাশে ক্যালিগ্রাফি
ড্রপ ওয়ালের নিচের নকশা
সদর দরজা
দক্ষিণ পাশ
করিডোর ক্যালিগ্রাফি
করিডোর ক্যালিগ্রাফি দক্ষিণ পাশ
দক্ষিণ পাশ

Saturday, June 23, 2012

Miniature Of Mohammad Abdur Rahim

Miniature Of Mohammad Abdur Rahim

Shamsi of Islam

Shamsi of Islam. This is the symbol of miniature art form.




Almighty,  Islamic Miniature



 This is the special miniature. It is Islamic Miniature.



Friday, March 2, 2012

লোগো ক্যালিগ্রাফি




এটিএন বাংলা চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানের জন্য এই লোগো ক্যালিগ্রাফিটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীম।

Saturday, February 25, 2012

দুটো ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং

মোহাম্মদ আবদুর রহীমের দুটো ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং।







এক. সাব্বি হিসমা-আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। ক্যানভাসে এক্রিলিক রঙ।




দুই. আল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ। হ্যান্ডমেড পেপারে একরিলিন রঙ।

Friday, February 10, 2012

ক্যালিগ্রাফি : নান্দনিকতার ভিন্ন মাত্রা

বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে পরিপূর্ণ ক্যালিগ্রাফি সেন্টারের প্রথম একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। বিশেষকরে ক্যালিগ্রাফির নান্দনিক দিক নিয়ে অধ্যয়ন এবং ক্যালিগ্রাফির প্রদর্শনীর আয়োজন, ক্যালিগ্রাফি শিল্পী এবং তাদের শিল্পকর্ম নিয়ে প্রথম একটি সামগ্রিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হচ্ছে। এসবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি ভিন্ন মাত্রার শিল্পকলার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা।

ক্যালিগ্রাফি শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আরো সৃজনশীল হতে পারে এজন্য ব্যাপকভিত্তিক কর্মশালার আয়োজন করা। এতে শিশুদের সাথে বয়স্করাও ক্যালিগ্রাফির নান্দনিকতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।



গবেষকরা বলছেন, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি আরবি লিপিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইসলাম পূর্ব সময়ে মক্কা নগরীতে আরবি লিপি প্রথম প্রচলন করেন বিশর ইবনে আবদুল মালিক আল কিন্দি। তিনি উত্তর আরবের হিরা এবং আনবার অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছ থেকে নাবাতিয়ান লিপি লেখার শৈল্পিক জ্ঞান অর্জন করেন। প্রাচীন তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, আরবরা ইসলামের আগে থেকেই আরবি লিপিতে লেখালেখি করত। এছাড়া সেময় ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা তাদের বইপত্র হিব্রু এবং সিরিয়াক লিপির সাথে আরবিতেও লিখত। সপ্তম শতাব্দীর প্রথম থেকেই আরবি ক্যালিগ্রাফি বিশেষকরে হেজাজে শিল্পিত হয়ে উঠতে থাকে।

আরব উপদ্বীপে ইসলাম প্রসারের সাথে সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ব পায় আরবি লিপি। পবিত্র কুরআন আরবিতে অবতীর্ণ হওয়ায় আরব-অনারব মুসলমানদের কাছে ইসলামের ভাষা হিসেবে আরবি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুন্নাহ নথিভুক্ত ও সংরক্ষণের জন্য আরবি লিপির ব্যবহার অনিবার্য হয়ে ওঠে। ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান ও শিক্ষা লাভের জন্য মুসলমানরা আরবিতে পড়া ও লেখার বিষয়ে আগ্রহী। সুতরাং আরবি ক্যালিগ্রাফি খুব দ্রুত উন্নয়ন ও বিকাশ লাভ করেছে। আরবি ক্যালিগ্রাফি আরব বিশ্ব ছাড়িয়ে অনারব দেশগুলোতে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটা এখন এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, আরবি ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যে অন্যান্য দৃশ্যমান শিল্পকলার শীর্ষমানের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। গবেষকরা আরবি ক্যালিগ্রাফিকে ’লিভিং আর্ট’ বা জীবন্ত শিল্পকলা বলে অবিহিত করছেন।

আরবি ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে লিপির ভেতর শৃঙ্খলা ও সুচারুবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। তখন একে প্রশাসনিক কাজেই প্রধানত ব্যবহার করা হত। আরবি লিপি গোলায়িত অর্থাত টানা হাতের পেঁচানো লেখা এবং জ্যামিতিক স্বভাবের দুই বৈশিষ্ট্য নিয়ে উন্নতি লাভ করে। হরফ সঠিক আকার ও আকৃতিতে লেখার পদ্ধতি এবং হরফ পৃথকীকরণ চিহ্ন যাকে নোকতা বলে, তা তখনও বের হয়নি। হরফে হরফে, শব্দে শব্দে, বাক্য, যতি চিহ্ন প্রভৃতি ব্যবহারের বিষয়ে কোন সুষ্পষ্ট বিধি দেখা যায়নি। এবিষয়ে জনমনে দ্বিধা-দ্বন্ধ কাজ করত। বিশেষ করে অনারব বিশ্বে দ্রুত মুসলমাদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আরবি লিপির ভেতর এসব অসমঞ্জস্যতা দূর করার এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। এপ্রেক্ষিতে নোকতা (হরফ পৃথকীকরণ চিহ্ন) এবং তাশকীল (স্বরচিহ্ন) পদ্ধতি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করেন আবুল আসওয়াদ আল দোয়ালী (মৃত্যু-৬৮৮ই.)। এরপর আল খলিল ইবনে আহমদ আল ফারাহিদী (মৃত্যু-৭৮৬ই.) আবুল আসওয়াদের তাশকীল পদ্ধতিকে পুণঃসংস্কার করেন। ১১ শতকের গোড়া থেকে আন্তর্জাতিকভাবে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং এতে ছয়টি স্বরচিহ্ন-কার হচ্ছে : ফাতাহ(আ-কার), দাম্মাহ(উ-কার), কাসরাহ(ই-কার), সুকুন(স্বরচিহ্ন মুক্ত চিহ্ন), সাদ্দাহ(দিত্ত্ব ব্যাঞ্জন বর্ণ চিহ্ন) এবং মাদ্দাহ(স্বরকে দীর্ঘকরণ চিহ্ন), এটা আলিফ প্রয়োগের মাধ্যমেও করা যায়।

উমাইয়া শাসন আমল হচ্ছে আরবি লিপির পরিবর্তনকালীন পর্যায়। কুফী লিপিতে ক্যালিগ্রাফি করা এ সময় পেশায় পরিণত হয়। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান একটি নতুন লিপির আবিস্কার করেন। তিনি এর নাম দেন মানসুব লিপি। উমাইয়াদের একটি স্মরণীয় কীর্তি হচ্ছে, জেরুসালেমে প্রাচীন আল কুদস নগরীতে মসজিদ আল আকসার পাশে কুব্বাতুস সাখরা(ডোম অব রক) মসজিদ নির্মাণ এবং তাতে ক্যালিগ্রাফির যুগান্তকরী প্রয়োগ।

এরপর আব্বাসীয় আমলে আরবি লিপি সৌন্দর্যমণ্ডিত ও উন্নয়ন একই সাথে হতে থাকে।
পর পর তিনজন খলিফার উজির আবু আলী ইবনে মুকলাহ(মৃত্যু-৯৪০ই.) প্রথম আরবি লিপির আনুপাতিক লেখন পদ্ধতি আবিস্কার করেন কোন জ্যামিতিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার না করেই। ইবনে মুকলাহ নাশখ(কপি করা) এবং সুলুস(এক তৃতীয়াংশ) লিপির আধুনিক আকার-আকৃতি রূপায়ন করেন। তিনি গোলায়িত টানা হাতের পেচাঁনো কুফি লিপির উদ্ভাবন করেন এবং তার উত্তরসূরী ইরাকী কুরআন বিশেষেজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার আলী বিন হিলাল ইবনে আল বাওয়াব এ লিপির উন্নয়ন করেন।

ক্যালিগ্রাফির ব্যাপক এবং শৈল্পিক প্রয়োগে চমৎকারিত্ব দেখান ফাতেমী খলিফাগণ। প্রাসাদ, মসজিদ, ও সিংহাসন সর্বত্র অঙ্গসজ্জা ও অলংকরণের কাজে ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার শিল্পকর্ম হিসেবে গৃহীত হয়। ক্যালিগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ক্যালিগ্রাফির বিভিন্ন ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সব রকম সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য হয়।



ওসমানীয়দের মিসর দখলের প্রেক্ষাপটে তুর্কীরা নাশখ লিপিতে অসাধারণ শৈল্পিক সুষমা আনয়ন করে। কারণ তুর্কীরা আগে থেকে গ্রীক ও উর্দু হরফের হাতে লেখার সুক্ষ্ম সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। ১৬ শতকের মধ্যভাগে হাফিজ ওসমান ও আহমদ কারাহিশারি নাশখ লিপিকে সৌন্দর্যের চুড়ান্ত মানে উন্নীত করেন। তুর্কীদের হাত ধরে আরবি ক্যালিগ্রাফি মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, আফগানস্তিান এবং মোগলদের হাত ধরে ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

মিসরে আরবি ক্যালিগ্রাফির উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় কাজ হচ্ছে পবিত্র কাবার গিলাফে স্বর্ণতন্তুতে কুরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি। খেদিভ ইসমাইলের আমন্ত্রণে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ও নকশা শিল্পী আবদুল্লাহ বেক জুহদী মিসরে আগমন করেন। তিনি কাবার গিলাফ(কিসওয়াহ) বিশেষভাবে নকশা এবং সুলুস লিপিতে ক্যালিগ্রাফি করেন। মিসরে ক্যালিগ্রাফি রেনেসাঁর অগ্রনায়ক হিসেবে তাকে অভিহিত করা হয়। বাদশাহ ফাওয়াদের সময়ে ক্যালিগ্রাফিকে শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শনী করা হয়। বিখ্যাত তুর্কী ক্যালিগ্রাফার মুহাম্মদ আবদুল আজিজ মিসরে অবস্থান করে আরবি ক্যালিগ্রাফির একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করেন এবং হরফকে স্বর্ণমণ্ডিত করার কৌশল প্রচলন করেন।
.


বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি এবং সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র দশটি জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী করেছে। ক্যালিগ্রাফির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করছে ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি। এছাড়া ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন, ক্যালিগ্রাফি একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ক্যালিগ্রাফির অঙ্গনে কাজ করে চলেছে। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা সুনাম অর্জন করে চলেছেন। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করা হচ্ছে বিদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে । ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে গবেষণাকর্ম প্রকাশিত ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা হচ্ছে।



তবে সামাজিকভাবে ক্যালিগ্রাফির একটি বড় ধরণের অর্জন হচ্ছে, ক্যালেন্ডার, ভিউকার্ডে এর ব্যাপক ব্যবহার। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিফট আইটেম হিসেবে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম প্রদান বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি একটি নান্দনিক শিল্পকলা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

Monday, October 17, 2011

My new Calligraphy



This Calligraphy made for UCB Dhaka.